Search This Blog

Thursday, January 31, 2019

কী লিখব?

             “ইচ্ছে যত লিখব তত”

    যখন প্রথম লেখা শুরু করা হয় তখন সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খায় তা হলো- কী লিখব? তারপর, আমার লেখার মান তো অত্যন্ত খারাপ আর কতো শত বানান যে ভুল।
   আচ্ছা, আপনার লেখার মান যদি খারাপই না হবে তবে আপনার লেখার মান ভালোর দিকে যাচ্ছে তা বুঝবেন কিভাবে? আপনি লেখা শুরু করা মাত্রই তো আর লেখক হয়ে যাননি। আর বানান ভুল ছাড়া মানুষ আছে বলে আমার মনে হয় না। লিখতে গিয়ে জানা থাকা সত্বেও অনেক কিছু মিসটেক হয়ে যায়, আর আপনি আছেন বানান ভুল নিয়ে । লেখা একটা শিল্প যা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হয়, শুধু জানা থাকলেই হয় না। আমারও অনেক বানানে সমস্যা আছে কেননা আমি নূতন, তাই বলে কি আর লেখালেখি করবো না? আবু তাহের মিসবাহ সাহেব তাঁর এসো কলম মেরামত করি বইয়ে লিখেছেন, এতদিন লেখালেখি করে এসে এই বয়সে তিনি তাঁর একটা বানান ভুল ধরতে পেলেন যা তিনি আগে জানতেন না, আর তাই সেই বানানে ভুল করতেন। সেটা হলো ‘গড্ডলিকা’ তিনি লিখতেন ‘গড্ডালিকা’। আমি এটা পড়ার পর যত লেখকের লেখায় এই শব্দটা পড়েছি তাঁদের অনেকের লেখায় এই বানানটা ভুল পেয়েছি।
   এবার ভাবছেন কী লিখবেন?
   সমস্যা নেই, এটার সমাধানটা আরও সহজ। আপনি লিখতে বসে যাবেন সকালে যখন কোনো কাজ শুরু করেন নি। এবার সমস্ত দিন কী কী কাজ করবেন তা লিখুন, প্রতিদিন একই কাজ করার থাকলেও সমস্যা নেই, যা প্রথম দিন লিখেছেন সেটাকেই আবার নূতন আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা করুন। বাক্যগুলো নূতন শব্দ দিয়ে বা শব্দগুলোকে এদিক ওদিক করে লিখুন। এবার লিখুন রাত্রে যখন আপনার সব কাজ শেষ হয়েছে। কাজগুলো কিভাবে কিভাবে শেষ করলেন তা লিখুন, আরো লিখুন মনের গোপন কথা যা অন্যকে বলতে ভয় পাচ্ছেন অথবা সঙ্কোচ বোধ করছেন।
   মাত্র দু’চারদিন আগে, যখন কিছু লিখতাম শুধু নিজের কথা লিখতাম, নিজেকে নিয়ে লিখতাম গোপন ডায়েরিতে। আমি জানি লেখকদের যাত্রা শুরু হয় এভাবেই, আমি লেখকদের সঙ্গানুসারে লেখক না হলেও, নিয়মিত লেখা চর্চার কারণে লেখক, কেননা আমি প্রতিদিন লিখি।
   যখন নতুন লেখা শুরু করা হয় তখন গোপন ডায়েরি থাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধু লেখকরাই অনুধাবন করতে পারে। যখন প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম, কিছুদিন যেতে না যেতেই একটা করে নতুন ডায়েরির প্রয়োজন অনুভব করতাম। এটা এ কারণে নয় যে- অনেক বেশি লিখতাম আর দ্রুত ডায়েরি ভরে যেতো।
   বরং এর কারণ ছিলো -আমি প্রতিটা ডায়েরিকে নিদ্রিষ্ট কোনো প্রসঙ্গের জন্য নির্ধারণ করতাম, আর তখন কোনো ব্যাপারে দু’এক পৃষ্ঠা লিখে অন্য প্রসঙ্গের কথা মনে হতো অথবা যে বিষয়ে লেখা শুরু করেছিলাম তা আর শেষ করতে পারতাম না তখন আরো ডায়েরি কেনার চিন্তা করতাম।
   কোনো লেখা শুরু করেছি কিন্তু দু’একদিন যাবার পর যখন সেটা আর মনে ধরছিলনা, লেখার মান খারাপ মনে হচ্ছিল তখন সেই পৃষ্ঠাকে ছিড়ে ফেলতাম। এভাবে যে কত পৃষ্ঠা ছিঁড়ে কুচি কুচি করেছি তার হিসেব আমার কাছে নেই।
   তাই এমন ভাববেন না যে- আমার লেখা ভালো নয়, লেখা আসে না, কি লিখব জানি না, বানান ভুল হয়, লেখাটাকে ছন্দে মেলাতে পারি না। এগুলো মনটাকে হীন করে দেবার জন্য যথেষ্ট।
   বরং আপনি যে লিখতে পারেন না, আপনার ডায়েরিতে সেটাই লিখুন। লিখুন - ‘আমি লিখতে চাই, কিন্তু লিখতে পারি না, মাথা ভরা কথা সেগুলোকে কলমের মাধ্যমে খাতায় আনলেই লেখা হয়ে গেলো কিন্তু সেটাতেও আমি অক্ষম। আমি জানি না কিভাবে সক্ষম হওয়া যায়।’ আরো যা মন চায় তাই লিখবেন দেখবেন আপনার লেখা হয়ে গেছে। আর বিশ্বাসই করতে পারবেন না আপনি এতো ভালো লিখতে পারেন।
    আমার লেখার পর ভালো না লাগায় পৃষ্ঠা ছেঁড়ার মতো কাজটা আপনিও করতে পারেন। এমন গোপন কথা লিখে ফেলেছেন যা অন্যকে দেখানো যাবে না একদম তাহলে সেটাকে ছাই বানিয়ে দিন আগুনে পুড়ে। আবার লিখুন, ভালো হয়নি আবার পুড়ে ফেলুন। কাঁকড়ার ঠ্যাং বগের ঠ্যাং লিখুন, ভালো করে লিখতে হবে না, লেখার পর ভালো লাগলে নূতন করে কোথাও সেটা কপি করুন।
   আর হ্যা লেখা কিন্তু একটা সৃজনশীলতা তাই অন্যের লেখা থেকে কপি করবেন না, তাহলে কিন্তু আপনার মেধা বিকাশের সম্ভাবনাও থাকবে না।

No comments:

Post a Comment